ঝালকাঠি-১ আসনে বইছে নির্বাচনী আমেজ

প্রকাশঃ জুলাই ১৭, ২০১৭ সময়ঃ ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

মোঃ আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি সংবাদদাতা:

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের রাজনৈতিক কার্যক্রম আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এ আসনের বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুন সম্প্রতি বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। ঢাকার হোটেল রেইনট্রিতে দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন তোলে। হোটেলটি বিএইচ হারুনের ছেলে মাহির হারুনের। ফলে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএইচ হারুন এলাকায় অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যান।

রেইনট্রিতে ধর্ষণ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করায় কাঁঠালিয়া উপজেলার বাদল হাওলাদার নামে এক সাংবাদিককে মারধর করে বিএইচ হারুন সমর্থিত ক্যাডাররা। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা আন্দোলনে নামলে আরও চাপে পড়েন বিএইচ হারুন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কারণে এবার মনোনয়ন হারাতে পারেন তিনি।

সেক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং করে যাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মু. মুনিরুজ্জামান মুনির, দৈনিক বাংলাদেশ সময় পত্রিকার সম্পাদক ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ড. এমএ হান্নান ফিরোজ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মু. ইসমাইল হোসেন।

অন্যদিকে রাজনৈতিক মামলা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর ও সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন কিছুটা চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। অন্যদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) অনেকটা দুর্বল। তবে জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ঝালকাঠিতে-১ এ ভালো অবস্থান আছে।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম দলের হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। শাহজাহান ওমর জানিয়েছেন, হাই কোর্ট থেকে ঐ মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির উপদেষ্ঠা শিল্পপতি রফিকুল ইসলাম জামাল। এ ছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকতও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন । গোলাম আজম সৈকত মাঝে মাঝে এলাকায় গণ সংযোগ করে নেতা কর্মীদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন ।

জাতিয় পার্টি (জেপি) থেকে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যেই প্রচারণা শুরু করেছেন কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও ঝালকাঠি জেলা জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি এ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম রুবেল। তবে (জেপি) চেয়ারম্যান বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুরের পাশাপাশি এ আসনে আগামীতে নির্বাচন করতে পারেন।

জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যেই প্রচারণা শুরু করেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সেলিমা খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ কে এম সেলিম রেজা, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কামরুল ইসলাম খান ও কাঁঠালিয়া জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা।

এদিকে, কাঁঠালিয়া উপজেলা জামাতের আমির মজিবুর রহমান বলেন, আমারা বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ আছি। আসছে নির্বাচনে জামাতের ভোট বিএনপিকে জয়ী করতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলায় আসামি হওয়া স্বত্ত্বেও তাদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে দলকে ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসনে আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী করে তুলছে।

এক সময়ের জাতীয় পার্টির দখলে থাকা ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসনে বর্তমানে জাতীয় পার্টির অবস্থান অনেকটা দুর্বল। তৎতকালিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর এ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় জাতীয় পার্টি ক্ষমতা হারানোর পর অনেক বাঘা নেতারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সমর্থক-ভোটার থাকলেও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে সে গোলায় ফসল তুলতে পারছে না তারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসন বিএনপি চায় যেভাবে হোক তা পুনরুদ্ধার করতে আর আ’লীগ চায় তাদের আসন ধরে রাখতে।

তবে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে আ’লীগ প্রার্থীদের লড়াই হবে সমানে সমান। আ’লীগের অবস্থান সুদৃঢ় হলেও আগামী নির্বাচনে এ আসনে বরাবরের মতোই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমন আভাস পাওয়া গেছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসন জুড়ে নির্বাচনী আমেজ বইছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G